অপরাধ না করেও সাজা, মানে নির্দোষ ব্যক্তির সাজা। এরকম ঘটনা আমাদের এই সমাজে বিচিত্র কিছু নয়; তবে সেটা ঢালাওভাবে নয়, ঘটে মাঝে মধ্যে। কিন্তু ধূমপানের মতো ‘অপরাধ’ না করেও ‘সাজা’ ভোগ করতে হচ্ছে অসংখ্য মানুষকে। অর্থাৎ পরোক্ষ ধূমপানে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন অনেক নারী পুরুষ, শিশু। জরিপের তথ্য হচ্ছে, ধূমপান না করেও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন দেশের কমপক্ষে এক কোটি নারী। পুরুষদের ধূমপানের ফলে নারীরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন বেশি। তাছাড়া, ধোয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। নারীর মধ্যে শতকরা ২৮ জন এবং পুরুষের মধ্যে শতকরা ২৬ জন ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন। বিভিন্ন সময় খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানের জরিপেই বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।
তামাক পণ্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ধূমপান বা তামাকপণ্যের বিরুদ্ধে যতোই প্রচারণা চালানো হচ্ছে, ততোই যেন এর প্রতি মানুষের ‘আকর্ষণ’ বাড়ছে। ধূমপানে আসক্ত নারী, পুরুষ, তরুণ সমাজ। ঠিক কতো মানুষ তামাকে আসক্ত তার পরিসংখ্যান নেই। তবে বিভিন্ন সময় পরিচালিত জরিপে জানা গেছে, দেশে শতকরা ৪৩ জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করেন।

[সেই হিসেবে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় সাত কোটি। এর মধ্যে নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা আট লাখের বেশি। তার সঙ্গে রয়েছে ধূমপান না করেও এর শিকার হওয়া। পুরুষদের ধূমপানের ফলে নারীদের পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়ার হার এই পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক বেশি। প্রত্যক্ষ ধূমপান, পরোক্ষ ধূমপান কিংবা ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের ফলে জনস্বাস্থ্যের কী ক্ষতি হচ্ছে- সেটা কারও কম বেশি অজানা নয়।]

বিশেষ করে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার নারীদের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি হচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। চিকিৎসকদের মতে তামাক সেবন নারীর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন মুখের ক্যান্সার, খাদ্যনালীর ক্যান্সার, অগ্নাশয়ের ক্যান্সার, রক্তচাপ ও হৃদকম্পন বৃদ্ধির মতো মারাত্মক রোগের কারণ। এছাড়া, নারীদের ক্ষেত্রে সন্তান জন্মদান সংক্রান্ত জটিলতাও হতে পারে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যাসহ অন্যান্য জটিল রোগের সৃষ্টি হতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ২০০৫ সালে ধূমপান ও তামাকপণ্যের ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন পাস হয়েছে। আইনে পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ। কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। পরবর্তীতে এই আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে, কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
ধূমপানের পক্ষে কৌশলী প্রচারণা চালাচ্ছে সিগারেট বিড়ি উৎপাদনকারী কোম্পানীগুলো। অথচ সিগারেট-বিড়ির যেকোন ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারণা আইনত নিষিদ্ধ। অর্থাৎ ধূমপান বিরোধী কোন আইনই কার্যত প্রয়োগ হচ্ছে না শতভাগ। ধূমপানের পরোক্ষ শিকার নারী, শিশুসহ অধূমপায়ীরা। অথচ ধূমপায়ীদের কোন অধিকার নেই অন্য কারও ক্ষতি করার। এক্ষেত্রে এই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার নারী পুরুষদেরই সোচ্চার হওয়া দরকার ধূমপায়ীদের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে ধোঁয়াবিহীন তামাক যেমন- সাদা পাতা, জর্দা ইত্যাদি ব্যবহারের বিরুদ্ধেও কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।